সর্বশেষ সংবাদ

Post Top Ad

Your Ad Spot

Thursday, May 14, 2020

বাসা-বাড়ি বা ছাদে জুমার নামাজ পড়া যাবে কিনা-এব্যাপারে শরীয়তের হুকুম।

বাসা-বাড়ি বা ছাদে জুমার নামাজ পড়া যাবে কি? এ ব্যাপারে ইসলামি শরীয়তের হুকুম কী?

  • ইসলামিক ডেস্কঃঃ-  কভিড-১৯ তথা নভেল করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জারি করা হয়েছে লকডাউনের আইন। লকডাউনের ভেতর সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ। মসজিদে জুমার নামাজেও সে নিষেধাজ্ঞা থাকছে।
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা জুমার দিন জুমা না পড়ার যন্ত্রণা ভোগ করছেন। এক জীবনে যারা কখনও জুমা ত্যাগ করেননি তাদের জন্য জুমা ত্যাগ করা বড়ই কষ্টের।
@@@ সে জন্য আজকের প্রশ্ন হলোঃ-
১) করোনা ভাইরাসের কারনে মসজিদে না গিয়ে বাসা, বাড়ি বা বাসার ছাদে জুমার নামাজ আদায় করা যাবে কী?
২)  তা ছাড়াও অনেক সময় অনেক কারনে জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়া সম্ভব হয় না, তখনি কি উক্ত স্হানে কয়েকজন মিলে জুমার নামাজ আদায় করা যাবে?

বিঃদ্রঃ উক্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমাদের Youtube চ্যানেল Online Bangla Madrasa  এ একটি দলীল ভিত্তিক আলোচনা ও উত্তর আছে, সেখান থেকে দেখে নিতে পারেন।
** ভিডিও টির লিংকঃ-

@@ উক্ত প্রশ্নের জবাবে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া টি বাংলায় তুলে ধরা হলোঃ- 
 বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে যে কোয়ারেন্টাইন চলছে, তাতে মসজিদ বা ঘরে জুমা আদায়ের বিস্তারিত বিবরণ হলো এই-

(ক) যে সব মসজিদে জুমা আদায় সহিহ হওয়ার শর্ত সমূহ পাওয়া যাওয়ার কারণে এতদিন ধরে জুমার জামাত হয়ে আসছে, যেমন শহর, উপশহর বা বড় গ্রামের মসজিদ, বর্তমান পরিস্থিতিতেও সে সব মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে হবে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে কজন মুসল্লি নিয়ে জুমা আদায়ের অনুমতি দেয়া হবে, সে কজন নিয়েই জুমা আদায় করতে হবে। সেক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, ইমাম ব্যতিত সর্বনিম্ন তিনজন মুসল্লি থাকতে হবে। পূর্বে যে সব শহর বা উপশহরে কিছু মসজিদে জুমা হতো, বাকি মসজিদগুলো ছিলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে সেখানের সব মসজিদে এখন জুমার জামাত চালু করা যেতে পারে; মুসল্লির সংখ্যা হবে চার থেকে পাঁচজন। এতেও কিছু মানুষের জুমা আদায়ের ব্যবস্থা হবে।

@@ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে মসজিদে পাঁচ, ছয় জনের বেশি আসা নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। এটা জনগণের কল্যাণের জন্যই। তাই এটা জুমা সহিহ হওয়ার শর্ত ‘ইজনে আ’ম’ বা ব্যাপক অনুমতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। কেননা এ সব আইন দ্বারা মানুষকে জুমা থেকে ফিরিয়ে রাখা উদ্দেশ্য নয় বরং এগুলো লংঘন করা দ্বারা, যে বড় বিপদ আসতে পারে সেগুলো থেকে মানুষকে বাঁচানো উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে ফিকহের কিতাবগুলোতেও আলোচনা পাওয়া যায়। যেমন বলা হয়েছে, ‘জুমার নামাজে দাঁড়ানোর পর মসজিদে শত্রু প্রবেশের আশঙ্কা হলে মসজিদের দরজা বন্ধ করে দেয়া ওয়াজিব।’ (হাশিয়াতুত ত্বহত্ববী আলাদ দুররুল মুখতার, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৪৪, প্রকাশক- মাকতাবাতুল ইত্তেহাদ দেওবন্দ)।

@@প্রসিদ্ধ একটি ফতোয়ার কিতাব ‘ইমদাদুল ফতোয়া’। সেখানে এ প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘ ‘ইজনে আ’ম’ থাকা জুমা সহিহ হওয়ার শর্ত। এর মর্ম হচ্ছে, কোনো ব্যক্তিকে নামাজের কারণে ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। অন্য কোনো কারণে ফিরিয়ে দেয়া হলে, তা ‘ইজনে আ’ম’ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না।’ (ইমদাদুল ফতোয়া, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৬১৪, প্রকাশক- মাকতাবায়ে জাকারিয়া দেওবন্দ)। 
ইমদাদুল আহকামে এসেছে, ‘যদি সেনানিবাস বা দূর্গের ভেতরে জুমা আদায় করা হয় তাহলে জুমা সহিহ হবে। যদিও সেনানিবাস বা দূর্গের ভেতরে বাহির থেকে লোক আসা নিষেধ। কেননা, নিষেধের কারণ নামাজ থেকে ফিরানো নয় বরং শৃঙ্খলাগত। (ইমদাদুল আহকাম, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৭৫১, প্রকাশক-মাকতাবায়ে দারুল উলুম করাচি)। (আলোচনার সারমর্ম হলো নামাজের কারণে কাউকে আসতে বাধা দিলে সেটা ‘ইজনে আ’ম’ এর সাংঘর্ষিক হবে। শৃঙ্খলা, জনস্বার্থ বা নিরাপত্তার জন্য বাধা দিলে সাংঘর্ষিক হবে না)।
(খ) মহল্লার যারা মসজিদে জুমা আদায় করতে পারবে না, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো হয়রানি বা নিষেধের আশঙ্কা না হলে ‘ইজনে আ’ম’ এর সঙ্গে নিজেদের বৈঠকখানা বা বাহির কামরায় জুমা আদায় করবে। অর্থাৎ আশপাশের লোকদেরকে ইত্তেলা দিবে, যেন যাদের জুমায় শরীক হওয়ার ইচ্ছা আছে তারা শরীক হতে পারে। জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার খাতিরে এখানেও যদি চার-পাঁচজনের বেশি জমায়েত হওয়া নিষেধ হয় তাহলে ইমাম ব্যতিত তিনজন বালেগ পুরুষ মুসল্লি নিয়ে জুমাই আদায় করবে। খুতবা ও কেরাত সংক্ষেপ করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো হয়রানি বা বিধি-নিষেধের আশঙ্কা হলে জুমার আগেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে আশ্বস্ত করবেন। সতর্কতা স্বরূপ নিম্নের দু’টি বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে-
@@@@
এক. যারা নিজের ঘর বা বাইরের কামরায় তিন, চারজন মুসল্লি নিয়ে জুমা আদায় করবেন, আশঙ্কা ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোতে তারা শুধু নিজেদের বুঝের ওপর ভরসা করবেন না। বরং দুজন আলেম ও অবস্থা সম্পর্কে গভীরভাবে জানেন এমন দু’জন ব্যক্তির পরামর্শ নিয়ে জুমা আদায় করবেন।
@@@@
দুই. ভবিষ্যতে অবস্থা কোন দিকে গড়াবে তা এখন বলা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেক শুক্রবারে জুমা আদায়ের ব্যাপারে ওই দিনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অবস্থা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে পূর্বের কোনো জুমার ওপর তুলনা করে জুমা কায়েম করা যাবে না।
@@@@
(গ) শহর, উপশহর বা বড় গ্রামে থেকেও যারা পূর্বে বর্ণিত বিবরণ মেনে নিজেদের বৈঠকখানা বা বাহির কামরায় জুমা আদায় করতে সক্ষম হননি। চাই তা জুমার ইমাম না পাওয়া, প্রশাসনের পক্ষ থেকে হয়রানির আশঙ্কা, মানুষের সৃষ্টিগত ভয়, তিনজন মুসল্লি না পাওয়া বা অন্য কোনো কারণে হোক তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে অপারগ হিসেবে সাব্যস্ত হবেন। তারা জুমার স্থলে জোহর আদায় করে নেবে। এটা তাদের জন্য মাকরূহও হবে না। কেননা, নিজেকে হয়রানিতে ফেলা ইসলাম সমর্থন করে না।

@@সকল ইসলামিক পোস্ট করতে বা পড়তে আমাদের Facebook গ্রুপে এড হয়ে সাথে থাকুন, ধন্যবাদ। 


No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages