@ কওমি মাদরাসা পরিচিতি (১)
#উম্মুল মাদারিস জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসা,ঢাকা
@ উম্মমুল মাদারিস কাটারা মাদরাসা এক নজরে দেখতে ক্লিক করুন,ছবিতে
#বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষা : ,,,,,,,,,,,,,
বিংশ শতাব্দীর ১ম বর্ষে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীতে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামী শিক্ষায়তন ‘দারুল উলুম হাটহাজারী মাদরাসা’ এরপর কয়েক দশকের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় আরো বেশ কিছু মাদরাসার গোড়াপত্তন হয়। কিন্তু তিন দশকেও রাজধানী ঢাকা ও তার আশেপাশে উল্লেখযোগ্য কোন ইসলামী শিক্ষায়তন গড়ে উঠেনি। কয়েক শতাব্দী পূর্বে অবশ্য সুলতানী আমলে সোনারগাঁ কেন্দ্রিক অনেকগুলো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের তথ্য পাওয়া যায়।
@ মাদরাসার সূচনা,,,,,,,,,,,,,,,,
উচ্চ শিক্ষা শেষে তিন বুযুর্গের বাংলাদেশে আগমন : এদিকে দারুল উলুম দেওবন্দ এর শিক্ষা ও থানা ভবন থেকে হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ. এর দীক্ষা নিয়ে ইলমে অহীর প্রচার ও প্রসারের এক অদম্য স্পৃহা নিয়ে দেশে আসেন তিন বুযুর্গ :
১)মুজাহিদে আযম হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ.
২)হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব পীরজী হুজুর রহ. এবং
৩) হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ.।
তারা দেশে এসেই দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে বি-বাড়ীয়া ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইউনুছিয়াতে শিক্ষকতা শুরু করেন। বি-বাড়ীয়ায় শিক্ষকতায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় তারা ভাবতে লাগলেন, কিভাবে দেশের আনাচে-কানাচে বিশুদ্ধ দ্বীনি জবাব দিয়ে দেয় যে, যদি তোমরা সারাদেশে দ্বীনি শিক্ষা - দীক্ষার বিস্তার ঘটাতে কারণ, কেন্দ্রের প্রভাব অঞ্চলে যেয়ে পড়ে আর অঞ্চলের প্রভাব কেন্দ্রে খুব কম পড়ে। তাই তাঁরা বিষয়টাকে নতুন করে ভাবলেন।
বড় কাটারা মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় চার বুযুর্গের অবদান :,,, ,,,,,,,,,,,,,,,,,,
মহান এই তিন ব্যক্তিত্ব ঢাকায় এসে দ্বীনি তালীম শুরু করার কথা ভাবলেন। এক সময় তাই হলো, তারা তিন জন ঢাকায় এসে একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছায় জিঞ্জিরা অধিবাসী বিশিষ্ট দানবীর হাফিয মুহাম্মদ হুসাইন রহ. এর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলেন ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে হাফিয হোসাইন রহ. এর সহযোগীতায় তার প্রদত্ত কাটারার ভবনে শুরু হয় রাজধানী ঢাকার প্রথম শিক্ষায়তন।
@ মাদরাসার নামকরন,,,,,,,,,,,
আশরাফ আলী থানবী রহ. এর নামানুসারে মাদরাসার নাম রাখেন “ হোসাইনীয়া নামকরণ করা হয়, জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম।
@পুরানো শাহী ভবন পরিচিতি, ,,,,,,
১৬৪৪ খ্রীষ্টব্দে শাহ সুজার প্রধান নির্মাণ প্রকৌশলী দেওয়ান মীর আবুল কাশেম ব্যবসায়ী ও অতিথিদের থাকার সুবিধার জন্য বুড়িগঙ্গার উত্তর তীরে ঘেঁষে একটি বিশাল ইমারত নির্মাণ করেন। যাকে কাটারা নামে ডাকা হতো। পরবর্তীতে সুবেদার শায়েস্তা খাঁ ইমামগঞ্জে শাহ সুজার কাটারার আদলে তুলনামুলক ছোট আকারের আরো একটি ইমারত নির্মাণ করেন। যা ছোট কাটারা নামে অভিহিত হয়। আর শাহ সুজার ইমারতটি বড় কাটারা নামে অভিহিত হয়। এই ভবনটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। অবশেষে পরিত্যক্ত অবস্থ্ায় হাফিয হোসাইন রহ. ভবন ও তৎসংলগ্ন ভূমি ক্রয় করে নেন। পীরজী হুজুর রহ. সদর সাহেব রহ. এবং হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর মাদরাসা প্রতিষ্ঠার আগ্রহ দেখে হাফিয হোসাইন রহ. এই ঐতিহাসিক ভবনটি তাদের কে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন। এউ তিন বুযুর্গ আলেমের ত্যাগ শ্রম ও সাধনায় গড়ে উঠে ঐতিহ্যবাহী হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসা।
@আল্লামা যাফর আহমদ ওসমানী রহ. বড় কাটারায় : এক সময় এই প্রতিষ্ঠানে ইলমে হাদীসের দরস প্রদানের জন্য আগমন করেন বিশ^বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ ‘ইলাউস সুনান’ এর রচয়িতা আল্লামা যাফর আহমদ ওসমানী রহ. সহ আরো অনেক খ্যাতনামা আলেম ও বুযুর্গ ব্যক্তিবর্গ। যাদের গদভারে ধন্য হয়েছিল ঢাকার মাটি। রতœ গর্ভা এই প্রতিষ্ঠান অসংখ্য সূর্য সন্তানদের জন্ম দিয়েছে। যারা বাংলাদেশে ইলমে দ্বীন এবং ইসলাম প্রচারের মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। এই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতে ও থাকবে ইনশাআল্লাহ। ঐতিহাসিক এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নিজের সুনাম ও সুখ্যাতি অক্ষুন্ন রেখে এদেশের ইসলাম পিপাসু ছাত্রদের মাঝে ইলমে দ্বীনের অমিয় সুধা বিলিয়ে যাচ্ছিল। ১৯৫০ খ্রীষ্টাব্দে হযরত সদর সাহেব রহ. ও হাফেজ্জী হুজুর রহ. সহ আরো বেশ কয়েকজন র্শীষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে ও প্রচেষ্টায় লালবাগ শাহী মসজিদ ও লালবাগ কিল্লার সংলগ্ন স্থানে ‘জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া’ নামে এক ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠাটি ও সূচনাকাল থেকে অদ্যবধি অত্যন্ত সুনামের সাথে ইলমে দ্বীন শিক্ষার মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে। শুধু দেশেই নয় সমগ্র মুসলিম বিশে^ই লালবাগ মাদরাসার অবদান স্বীকার করে থাকে।
পীরজী হুজুর রহ. এর বিশেষ অবদান
হযরত সদর সাহেব রহ. ও হাফেজ্জী হুজুর রহ. হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসা হতে চলে গেলেও এই প্রতিষ্ঠান তার নিজস্ব স্বকীয়তা নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। হযরত পীরজী হুজুর রহ. প্রতিষ্ঠানটির জন্ম - লগ্ন থেকে আজীবন প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বুযুর্গী, তাকওয়া ও পরিচালনায় প্রতিকুলতা পেরিয়ে মানযিলে মাকসূদের চুড়া স্পর্শ করেছিল। পীরজী হুজুর রহ. এর জীবদ্দশায় এবং তাঁর পরবর্তী ১৯৯৪ খ্রীষ্টাব্দে পর্যন্ত মাদরাসাটি অব্যাহত গতিতে দ্বীনি তা‘লীমের এক অফুরান ঝর্ণাধারার ভূমিকা পালন করে।
@মুফতী আমিনী রহ. এর বলিষ্ঠ পরিচালনায় :
হযরত পীরজী হুজুর রহ.এর ইন্তেকালের পর প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন কারণে বার বার হোঁচট খেয়েছে। তারপরও যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি বুযুর্গানে দ্বীনের আমানত। তাই একে কোনো ষড়যন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনা। সাময়িক গতিরোধ হলেও বুযুর্গানে দ্বীনের ইখলাছের বদৌলতে প্রতিষ্ঠানটি এখনও তার ঐতিহ্য নিয়ে টিকে আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত টিকবে ইনশাআল্লাহ। পীরজী হুজুরের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হয়েছে বড় কাটারা মাদরাসা। একটি মহল প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকলেও ২০০৩ খ্রীষ্টাব্দে জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা নুর হোসাইন কাসেমী দা.বা. কে সভাপতি করে ঢাকা মহানগরীর মাদরাসা সমূহের মোহতামীম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী মজলিসে শুরার মাধ্যমে দেশের শীর্ষ আলেমে দ্বীন হযরত সদর সাহেব রহ. এবং হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর সুযোগ্য ইলমী ও সিয়াসী ওয়ারিশ, জামেয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতী ফজলুল হক আমিনী রহ. এর বলিষ্ঠ পরিচালনায় প্রায় ৮ বছর প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়। মুফতী আমিনী রহ. বিশ^াস করতেন এবং প্রকাশ্যে বলতেন যে, এই মাদরাসা ক্ষমতা শক্তি বা বুদ্ধি দিয়ে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। দোয়া ও তাওয়াক্কুলের মাধ্যমেই পরিচালনা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা এই প্রতিষ্ঠানটি যাবতীয় ফেৎনামুক্ত রেখে বুযুর্গানে দ্বীনের তরয ও তরীকার উপর পরিচালনা করার এবং তাদের রেখে যাওয়া আমানত রক্ষার তাওফীক দান করুন।
@সুত্র,....হৃদয়ে আমিনী,ডায়রী ।
@@ সংগ্রহে ঃঃ- মাওলানা শরীফুল ইসলাম
No comments:
Post a Comment