সর্বশেষ সংবাদ

Post Top Ad

Your Ad Spot

Saturday, April 18, 2020

করোনা ভাইরাসের এই ভীতিকর পরিবেশেও লক্ষ মানুষের ভালোবাসায় বিদায় নিলেন কিংবদন্তি মুফাস্সিরে কুরআন মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী রহ. - মুফতি শরীফুল ইসলাম


করোনা ভাইরাসের এই ভীতিকর পরিবেশেও লক্ষ মানুষের ভালোবাসায় বিদায় নিলেন কিংবদন্তি মুফাস্সিরে কুরআন মাওলানা যুবায়ের আহমদ আনসারী রহ. - মুফতি শরীফুল ইসলাম

@@@ গত শুক্রবার বিকাল ছয়টা বেজে বিশ মিনিট চলে যান শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে
 মাওলার সান্নিধ্যে প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী রহ.
যেতে তো হবেই সবাই কে, কারন আল্লাহ তাআলার চিরন্তন সত্যবানী "প্রতৃেক নফস(আত্মা -প্রাণী) মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে)  অর্থাৎ সকল কে মরতে হবে,একদিন আগে আর পরে।
আর পৃথিবীর ইতিহাস তো তার জলন্ত সাক্ষী, তথা যেখানে সর্বপ্রথম মানব- নবী আদম আ. হতে আজ পর্যন্ত কেউ তার নির্ধারিত সময়ের বেশি ইহকালের এ জগতে থাকতে পারে নি, এমন কি সর্বশ্রেষ্ঠ মানব,সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল, আল্লাহ তাআলার হাবীব মুহাম্মাদ সা. ও এ জগত থেকে চলে গিয়েছেন।
@@@ তো যেতে যখন হবে তখন জীবন কে এমনভাবে সাজিয়ে নিতে হবে যাতে ইহকালের এ জগতে সকল মানুষ আমাকে মনে রাখে, আর পরকালে পাওয়া যায় আল্লাহ তাআলার দেওয়া সেই ওয়াদা গুলো।
কবির ভাষায় যে কথা টি ফুটে ওঠে
" এসেছিলে যখন এ ধরায় তুমি"
"কেঁদে ছিলে তুমি হেঁসে ছিলো সবে"
"এমন জীবন করিবে গঠন"
"মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন"
@@@ এ কথার বাস্তব উদাহরণ তো নবী-রাসুল সা.এর পরে সাহাবায়ে কেরাম ও আমাদের আকাবিরগন দেখিয়ে গিয়েছেন।
তথা আজো স্বর্ন অক্ষরে লেখা আছে যাদের নাম, যাদের কে সকলেই স্মরণ  করে,
সেই কাসেম নানুতবী রহ.
হোসাইন আহমাদ মাদানী রহ.
মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ.
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ.
শাহ আব্দুল আজিজ রহ.
হাজী শরীয়ত উল্লাহ রহ.
আশরাফ আলী থানভী রহ.
আল্লামা শফি রহ.
পীরজি হুজুর,হাফিজ্জী হুজুর,সদর সাহেব,মুফতি আমিনী রহ সহ কত মনিষীগন, (আল্লাহ তাআলা তাদের সকল কে জান্নাতের আলা মাকাম দান করুন)
@@@ যা হোক তারই দেখানো পথে চলে গেলেন বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ওয়াজ/তাফসির মাহফিল জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র ,দ্বীনের এক প্রতিভাবান খাদেম, আহলে হকের এক বলিষ্ঠকন্ঠ,কুরআনের তাফসীরপ্রেমী মুসলমানদের কাছে প্রবাদপুরুষ। নিরহংকার, নির্লোভ, ভদ্র, সজ্জনসহ অসংখ্য গুণাবলীর অধিকারী,মুখলেস, কিংবদন্তি মুফাস্সিরে কুরআন মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারী রহ.
(আল্লাহ তাআ'লা তাকে জান্নাতের আলা মাকাম দান করুন)
@@@ তাকে নিয়ে কিছু লেখার নেই, কারন যেদিকেই লিখবো শেষ হবে না, তিনি যে কুরআন প্রেমী মানুষের নিকট কত টা জনপ্রিয় ছিলেন তা তো মানুষ তার তাফসীর মাহফিলে দেখেছে, আজ আবার দেখিয়ে কবর জগতে চলে গেলেন এই মহা মানব, যেখানে করোনা ভাইরাসের ভয়ে মানুষ বাড়ি হতে বের হচ্ছে না, কেউ স্বাভাবিক ভাবে মারা গেলেও তার জানাযায় লোক যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না, সেখানে লক্ষ মানুষের শেষ শ্রদ্ধায় সমাধিত হলেন এই মুখলেছ মুফাস্সিরে কুরআন।
@@@ থেমে গেল কোরআনের এই সুর
নিভে গেল ইলমে দীনের অনন্য এ প্রদীপ
আর বাজবে না তার কন্ঠে পাগল করা সেই তেলাওয়াত…
@@@ আজ অনেক মুফাস্সিরে কুরআন পাওয়া যাবে কিন্তু তিনি যখন এই জগতে কুরআনের তাফসীরের খেদমত করেছেন,তখন তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন,কতটা জ্ঞানগর্ভ ছিল তার তাফসীর,কতটুক মধুর ছিলো তার আলোচনা সে সম্পর্কে বলার শেষ নেই।
@@@ সে সম্পর্কে সোস্যাল মিডিয়াতে তরুণ আলেম মাওলানা আব্দুল কাদির মাসুম লেখেছেন-
‘আকাবির মাশায়েখের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন মুফাসসিরে কুরআন হযরত মাও. যুবায়ের আহমদ আনসারী সাহেব আল্লাহর পিয়ারা হয়ে গেছেন’
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন!
এখন তো হাজার জন আছেন, কিন্তু তিনি যখন ছিলেন মাঠে একাই ছিলেন। একাই লড়েছেন। দেশের প্রান্তরে প্রান্তরে ঘুরে সুমিষ্টি সুরে কালামুল্লাহর বাণী শুনিয়ে ফিরেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে।
হযরত রহ. রসকস লাগিয়ে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেন বলে অনেকেই রসভরে তাঁর কথা শুনতো। কিন্তু তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী তথ্য উপস্থাপন করতেন। তিনি হেসে হেসে বলতেন তাই লোকেরা হাসাতেই সীমাবদ্ধ থাকত। অথচ এর ভেতরে তিনি অনেক জটিল জায়গা সমাধান করে চলে যেতেন।
সুরা ইয়াসীনের ‘আওয়ালাম ইয়ারাল ইনসানু আন্না খালাকনা’ আয়াতটি অনেক তাফসীর ঘাটার পর তাঁর বয়ানেই আমার ভালো করে সমাধা হয়েছিল।
হাশর হওয়ার ওপর তাঁর মুখে এমন অসাধারণ এক যুক্তি শুনেছিলাম যা আজও আমার নজরে কোথাও পড়েনি।
তাঁর মুখ থেকেই প্রথম শুনেছিলাম এ কথা, ” সুরা রহমান আল্লাহ শুরু করেছেন এভাবে- ‘দয়াময়, শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন।’ এখানে আল্লাহ শিক্ষার কথা বলতে গিয়ে রহমানি সিফাত দিয়ে শুরু করে এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, শিক্ষক ছাত্রের প্রতি ভালোবাসা ও রহমদিলা হতে হবে। আমার প্রতি গহরপুরী হুজুর রহ.-এর রহম দৃষ্টির কারণেই আজ আমি আপনাদের যুবাইর, আপনাদের আনসারী। আনসারী নামটা হুজুরেরই দেয়া।”
তিনি এক বেদআতি এলাকায় ওয়াজে গিয়েছিলেন। বয়ান শেষ করে ওঠবেন এমন মুহূর্তে তাঁর কাছে প্রশ্ন আসল, নবী নূরের তৈরী না মাটির? জবাবে তিনি বলেছিলেন, বাবাচানরা, আমি নবীর জন্মের সময় ছিলাম না। সুতরাং এটা আমি কি করে জানবো!
এভাবে হযরতের আরো কত কথা স্মৃতিতে ভেসে ওঠছে একের পর এক।
@@@ তিনি তাঁর এই বর্ণাঢ্য জীবনে দেশ থেকে দেশান্তরে কোরআন ও হাদিসের এর যে খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গিয়েছেন,
জীবনের অমূল্য সময়, শক্তি ও মেধা যার নিবেদিত ছিলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সাধনায়। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন। স্বজনদের সবরে জামীল দেন। তাঁর দ্বীনি কাজগুলো অব্যাহত থাকার সুব্যবস্থা করুন।
আমরা হযরতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
           @@@ লেখকঃ- মুফতি শরীফুল ইসলাম
                       ছাত্র- বড় কাটারা মাদ্রাসা, ঢাকা       

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages