সর্বশেষ সংবাদ

Post Top Ad

Your Ad Spot

Tuesday, May 19, 2020

দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ ইহজগৎ এ আর নেই ----

দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদিস আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ ইহজগৎ এ আর নেই ------
আল্লাহ তাআলার ডাকে সারা দিয়ে, প্রিয় হাবীবের সান্নিধ্য লাভে
ইলমে নববী (ইলমে হাদীস) জগতের সম্রাট, বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ দারুল উলুম দেওবন্দের প্রবীণ উস্তাদ  ও শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি সাঈদ আহমাদ পালনপুরী রহ. ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ৭ টায় মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেছেন।
এর আগে গত ১৪ মে হটাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে বার্ধক্য জনীত কারণে শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র [আইসিউতে] স্থানান্তর করা হয়।
@@@ তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিস ও প্রায় একযুগ ধরে বুখারি শরিফের দরস দানকরে আসছেন।
@@@ সারা বিশ্বের উস্তাযুল আসাতেযা- শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতী সাঈদ আহমাদ পালনপুরী রহ.এর  ইন্তেকালে  বিশ্বের সব আলেম উলামা ভক্তবৃন্দ শোকাহত।

@@@@@@
মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ. এর জিবনী
লেখক-----
মুফতী মুহাম্মদ নোমান কাসেমী
পরিচালক : আল-মারকাযুল হানাফী বাংলাদেশ, ঢাকা
******----
হযরত মাওলানা মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ.। তিনি বর্তমানে দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন ও শায়খুল হাদীস ছিলেন। আমাদের সময়ে ২০০৫/০৬ এ তিনি তিরমিযী শরীফ (প্রথম খন্ড) ও ত্বহাবি শরীফ পড়াতেন। তাঁর পড়ানোর ধরণ, তাকরীর উপস্থাপন, একেকটি বিষয়ের তাহকীক, ফিকহী মাসায়েলের বর্ণণা ইত্যাদি সবই অনন্য। আমি বলি তিনি এযুগের ইমাম শামী। তিনি ‘মুহাক্কিকুল আসর’, ‘মুহাদ্দিসে কবির’, ‘ফকিহুন নফছ’, ‘মুতাকাল্লিমে ইসলাম’, ও ‘মুফাসসিরে মিল্লাত’। আমি তাঁর প্রতিটি সবক, ক্লাসের প্রতিটি তাকরীর লিখে রাখি। আজো তা আমার সংরক্ষণে আছে।
তিনি অন্য সকল ওস্তাদ থেকে আলাদা। তাঁর পড়ানোর ধাঁচ, আর বোঝানোর ধরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছাত্ররা তাঁর ক্লাসে উপস্থিত থাকার জন্য পাগলপাড়া হয়ে অপেক্ষা করতেন। হুজুরের ক্লাসের নিয়ম ছিল, তিনি ক্লাসে আসার আগেই সকলকে ক্লাসে উপস্থিত হতে হতো। হুজুর ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার পর কেউ আর ক্লাসে প্রবেশ করার অনুমতি থাকতো না। হুজুর সকালে তৃতীয় ঘন্টা আর মাগরিবের পর এশা পর্যন্ত ক্লাস করাতেন। আহলে ইলমগণ তাঁকে এক বাক্যে চেনেন। তিনি তিনিই। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজন পড়ে না।
হুজুরের সুহবতে আমার কিছু সময় থাকার সুযোগ হয়েছে। হুজুরের সাথে জড়িয়ে আমার কিছু স্মৃতি ও অভিজ্ঞতা রয়েছে। ছাত্র ভাইদের মনে উৎসাহ তৈরীর জন্য এখানে কয়েকটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরলাম।

হযরতের মহানুভবতা
:
আমি প্রায় দিন আসরের পর মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ.এর বাসায় যেতাম। মসজিদে হুজুরের সাথে মাগরিব পড়ে রাত্রের ক্লাসে আসতাম। হুজুরের সামনে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকতাম। হুজুর খুবই মারউব ব্যক্তি। সুন্দর ও বড় চেহারা। লাল দাড়ি। সব মিলিয়ে অনেক প্রভাবপ্রতিপত্তি ওয়ালা একজন ব্যক্তিত্ব। সাধারণত: হুজুরের সামনে দাঁড়িয়ে কোনো ছাত্র কথা বলার সাহস করে না। বিশেষত: ভাষার দুর্বলতার কারণে বাংলাদেশীরা তেমন সাহস করে কথা বলতো না।
একদিন আসরের পর আমি হুজুরের বাসায় গেলাম। বাংলাদেশী আমি একা। ইন্ডিয়ান আরো দুইজন। আমরা তিনজন হুজুরের সামনে বসে রইলাম। হুজুর কিতাব মুতালাআ করছেন। আমি একদৃষ্টে হুজুরের চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ পর আরেকজন লোক রুমে প্রবেশ করলেন। সালাম করে হুজুরের কাছে গিয়ে বসলেন। তার লিখিত একটা কিতাব হুজুরকে হাদিয়া দিলেন। হুজুর জিজ্ঞেস করলেন, কে লিখেছে? তিনি বললেন, আমি। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি করো? তিনি সাহারানপুর মাজাহেরে উলূমে ইফতা পড়েন বলে জানালেন। হুজুর চুপচাপ তার লিখিত কিতাব পড়তে শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর বললেন- یہ غلط ہے صحیح یہ ہے তোমার এই লেখাটা ভুল, সহি এটা হবে। এভাবে তিনি বেশ কয়েকটা ভুল ধরিয়ে দিলেন, আর শুদ্ধটা বলে দিলেন। এরপর বললেন,
آج تمہارے نظر پہ سب صحیح ہے کرتے رہو بڑھتے رہو
‘এখন তোমার দৃষ্টিতে সব সহি, করতে থাকো চলতে থাকো,’ একদিন তোমার হাতেই ভুল ধরা পড়বে, তখন ঠিক করে দিও। এরপর হুজুর কলিংবেল টিপলেন। ভেতর থেকে কেউ এলোনা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে হুজুর নিজেই ভেতরে গেলেন। ফিরে আসার সময় দুটি নোট নিয়ে আসলেন। ৫০০ টাকার নোট কিনা সন্দেহ, ১০০ টাকার নোট এতে কোনো সন্দেহ নেই। এনে তার হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন,
لو یہ تمہیں ہدیہ کرتے رہو بڑھتے رہو
নাও এটা তোমাকে হাদিয়া, কাজ করো আর সামনে এগিয়ে যাও।
আমি হতভম্ব হয়ে হুজুরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। হুজুর তাকে প্রথমে যে কথা বলেছিলেন, ‘করতে রাহো বাড়তে রাহো’। এটাইতো তাকে উৎসাহিত করার জন্য যথেষ্ট। উপরন্ত তাকে টাকাও দিচ্ছেন। তাও কি! তার বই এর মূল্য হবে ৩০-৪০ টাকা। অথচ হুজুর তাকে দিচ্ছেন ২০০ কিংবা ১০০০ টাকা। সাথে মুখে এও বলছেন, ‘করো, এগিয়ে যাও।’
শুধু এতোটুকুই শেষ নয়। হুজুরের লিখিত ‘মাহফুজাত’ নামের তিন খন্ডের একটি চটি বই আছে। ফরিদ বুক ডিপু দিল্লী কর্তৃক ছাপা হয়েছে। তারা হুজুরের জন্য অনেকগুলো সেট পাঠিয়েছে। প্রতিটি সেট রাবার দিয়ে জড়ানো। হুজুর সেখান থেকে এক সেট টেনে নিলেন। তাকে দিয়ে বললেন, নাও এটাও তোমাকে হাদিয়া। আল্লাহর কসম, আমি নিস্ফলক হুজুরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। তাকিয়েই রইলাম। গভীরভাবে দেখতে লাগলাম হুজুরের এ আচরণ। হুজুর আমাকে দেখলেন। সেখান থেকে এক সেট কিতাব হাতে নিলেন। আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, تو بولے کیا دیکھ رہا لے یہ تجھے ہدیہ ‘তো বাওলে কেয়া দেখ রাহা, লে ইয়ে তুঝে হাদিয়া।’ তুই বোকা কি দেখছস, নে এটা তোকে হাদিয়া। হুজুর আমাদেরকে আদর করে ‘বাওলা’ বোকা, বলে ডাক দিতেন। আমি বাওলা শুধু তাকিয়ে দেখছিলাম। এজন্য আমাকে এক সেট ‘মাহফুজাত’ হাদিয়া দিলেন। কিতাবগুলো আমার আলমারিতে এখনো সংরক্ষিত আছে।
শুধু এখানেই শেষ নয়। হুজুরের টেবিলের উপর ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ, মোবাইল ফোন বন্ধ রাখুন’ ইত্যাদি বাক্য লিখিত বেশ কিছু স্টিকার রাখা ছিল। হুজুর নিজের হাতে সেগুলো বাছাই করতে লাগলেন। যেটাই ডবল পেলেন সেটাই ওই ছাত্রের হাতে দিয়ে বললেন, لو یہ تمہارے کہیں لگا دینا ‘নাও এটা তোমাদের কোথাও লাগিয়ে দিও’। এবারও আমি হুজুরের দিকে চেয়ে রইলাম। দেখতে লাগলাম। হুজুর আমাকে লক্ষ্য করে বললেন,
تجھے نہیں ملے گا تو نے کتاب نہیں لکھا
‘তুই পাবি না, তুই কিতাব লিখিস নি,। আমি কিতাব লিখিনি, আমি পাব না। এটাই তো বাস্তবতা। প্রথম যেটা পেয়েছি সেটা তো হুজুর মায়া করে দিয়েছেন। এখানে আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করল যে বিষয়টি। তা হল- সাহারানপুরের একজন ছাত্র দেওবন্দের মুফতি পালনপুরী সাহেবের হাতে নিজের লিখিত একটি কিতাব তুলে দিলেন। হুজুর তার সাথে কি আচরণ করলেন। কত উৎসাহিত করলেন। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি, সে আগামী ছয় মাসে আরেকটি কিতাব লিখে হুজুরের হাতে অর্পণ করার চেষ্টা করবে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের ছাত্ররা দেওবন্দে সবচেয়ে সেরা নাম্বার অর্জন করার পরেও দেশে এসে ম্লান হয়ে যায়। নিরুৎসাহিতা আর ভৎসনার কবলে পড়ে তাদের প্রতিভাগুলো সব মাটির সাথে মিশে যায়। আমরা এজন্যই পিছিয়ে যে, আমাদেরকে কেউ এগিয়ে দেয়না। বরং কেউ এগুতে চাইলে তাকে টেনে নিচে নামিয়ে দেয়া হয়।

হযরতের মশকরা :

প্রায়দিন আমি হযরতের বাসায় চলে যেতাম। আসরের পর অনেক ছাত্র সেখানে জমা হতো। হুজুর বসে থাকতেন আমরা চারদিক ঘিরে হুজুরকে দেখতাম। ইন্ডিয়ান ছাত্ররা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ চাইতো, বিভিন্ন প্রশ্ন করতো। আমরা বাংলাদেশিরা খুব বেশি কথা বলতাম না। কারণ আমাদের ভাষাগত দুর্বলতা আছে। উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। তাছাড়া এত বড় ব্যক্তিত্বের সামনে কথা বলতে আমরা ভয় পেতাম। এজন্য আমরা খুব বেশি কথা বলতাম না। একবার এক বাঙ্গালী সম্পর্কে হুজুর মশকরা করে বলতে ছিলেন, সে বাঙ্গালি উর্দূতে কথা বলতে পারতো না। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, তুমি কোন জামাতে পড়বে? সে উত্তরে বললো- (مشكوة) মেশকুত জামাতে। তা শুনে আমরা সবাই হাসলাম। হুজুরও হাসলেন। যদি কেউ সহি শুদ্ধভাবে শব্দের উচ্চারণ করতে না পারে, তাহলে সে নিজের মনের ভাব অন্যের সামনে প্রকাশ করবে কিভাবে?

হযরতের বাসায় বাংলাদেশী ওলামায়ে কেরাম :

২০০৫ সালের কথা। সেই বৎসর হারদুঈ হযরত রহ. ইন্তেকাল করেন। হযরতের ইন্তেকালের বছর বাংলাদেশের বহু ওলামায়ে কেরাম হযরতের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান। সে বছর মুফতি আব্দুর রহমান সাহেব রাহিমাহুল্লাহ মুফতি ওয়াক্কাস সাহেব, মুফতি হাবিবুর রহমান সাহেব, মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব, ইছাপুর মাদরাসার মুহতামিম সাহেবসহ আরো অনেক উলামায়ে কেরাম হারদুঈ গমন করেন। সেই সুবাদে তারা দারুল উলুম দেওবন্দেও সফর করেন।
ফেনী ফুলগাজী আশরাফিয়া মাদরাসার মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান সাহেব, ধুমসাদ্দা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল আউয়াল সাহেব, চট্টগ্রাম ইসাপুর মাদরাসার মুহতামিম সাহেব। তাঁরা তিনজন একসাথে দারুল উলুম দেওবন্দে আসেন। আমি তাঁদেরকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পরিদর্শন করি। বিভিন্ন আসাতিযায়ে কেরামের কাছে যাই। বিভিন্ন ওস্তাদের সাথে সাক্ষাত করি।
একদিন বিকালে তাঁদের তিনজনকে সাথে নিয়ে আমি মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী সাহেব রহ. এর বাসায় যাই। হুজুর বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের সাথে কথা বলেন। একপর্যায়ে হুজুর বলেন, বাংলাদেশী ওলামায়ে কেরাম উর্দূ বুঝেনা। উর্দূতে তারা দুর্বল। হুজুর বললেন, তারা যে উর্দু বুঝে না, সেটা আমি কিভাবে বুঝলাম? মাঝেমধ্যে আলেম-ওলামার সামনে আমি আলোচনা করি। অনেক সময় এমন হয় যে, তাদের সামনে হাসার জন্য কিছু কৌতুক বা লতিফা বলি। কিন্তু তারা হাসেন না। হাসবেন তো বুঝলে। বুঝেন না বলেই হাসেন না। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, বাংলাদেশী ওলামায়ে কেরাম উর্দু কম জানেন।
মুফতি হাবিবুর রহমান সাহেব এ কথা শোনার পর বলেন, হুজুর! আমরা তো বলবো, আপনারা বাংলা বুঝেন না। মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী সাহেব রহ.বলেন, আমাদের বাংলা বুঝার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনাদের উর্দু বুঝার প্রয়োজন আছে। কারণ, কুরআন- হাদিস আরবিতে। ভারতবর্ষে কোরআনের তাফসির, হাদীসের শুরুহাত সবকিছু হলো উর্দুতে। দারুল উলুম দেওবন্দের সকল আকাবির উর্দু ভাষাভাষী। সুতরাং উর্দু ভাষা যদি আপনারা ভালো করে না জানেন, না বুঝেন, তাহলে কোরআনের তাফসির কিভাবে বুঝবেন? হাদিসের শুরুহাত কিভাবে বুঝবেন? মদিনা শরীফ থেকে ইলম দারুল উলুম দেওবন্দ আসছে আর দেওবন্দী ওলামায়ে কেরাম সেটাকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এখন কুরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা বুঝতে হলে আপনাকে উর্দূর সহযোগিতা নিতে হবে। যদি আপনি উর্দূ পরিভাষাগুলো না বুঝেন, তাহলে কুরআন-হাদিস কিভাবে বুঝবেন? এজন্য আমাদের বাংলা বুঝা জরুরী নয়, কিন্তু আপনাদের উর্দু বুঝা জরুরি।
এবং আব্বা বলে সম্বোধন করতো।
দারুল উলুম দেওবন্দের সদর গেট থেকে বের হয়ে হাতের বামে এসে ডান পাশে একটা হোটেল আছে। একদিন সেই হোটেলে আমি নাস্তা করতে ঢুকলাম। দেখলাম, এলাকার এক যুবক হোটেলের ক্যাশে বসা মুরুব্বি লোকটাকে সম্বোধন করে বলছেন ‘আব্বাস আস সালামু আলাইকুম’ আমি সেটাও লক্ষ্য করলাম যে, এখানে একটা মুরুব্বিকে লক্ষ্য করে একজন যুবক ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করেছেন। এভাবে আমি বেশ কিছু জায়গায় লক্ষ্য করলাম। পরে জানতে পারলাম যে, ওই অঞ্চলের সাধারণ রেওয়াজ হলো, ছোটরা মুরুব্বী লোক দেখলে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করেন। বিষয়টা আমার কাছে ভালই লেগেছিলো।

এবং আব্বা বলে সম্বোধন করতো।
দারুল উলুম দেওবন্দের সদর গেট থেকে বের হয়ে হাতের বামে এসে ডান পাশে একটা হোটেল আছে। একদিন সেই হোটেলে আমি নাস্তা করতে ঢুকলাম। দেখলাম, এলাকার এক যুবক হোটেলের ক্যাশে বসা মুরুব্বি লোকটাকে সম্বোধন করে বলছেন ‘আব্বাস আস সালামু আলাইকুম’ আমি সেটাও লক্ষ্য করলাম যে, এখানে একটা মুরুব্বিকে লক্ষ্য করে একজন যুবক ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করেছেন। এভাবে আমি বেশ কিছু জায়গায় লক্ষ্য করলাম। পরে জানতে পারলাম যে, ওই অঞ্চলের সাধারণ রেওয়াজ হলো, ছোটরা মুরুব্বী লোক দেখলে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করেন। বিষয়টা আমার কাছে ভালই লেগেছিলো।

ছাত্রদের সাথে হযরতের হাসি মজাক :

মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী সাহেব রহ. মাগরিবের পর তিরমিজি শরীফ (প্রথম খন্ড) এর সবক পড়াতেন। বাসায় মাগরিবের নামাজ আদায় করে তিনি মাদরাসায় হেঁটে আসতেন। একদিন হুজুরের সাথে মোটাসোটা, সু স্বাস্থের অধিকরী, উঁচা লম্বা এক লোক ক্লাসরুমে প্রবেশ করেন। হুজুর সামনে হেঁটে আসেন, আর তিনি পেছনে। হুজুর আসনে বসেন, আর তিনি হুজুরের ডান পাশে নিচে বসেন। হুজুর সাধারণ নিয়ম অনুসারে সবক শুরু করার আগে আমাদের সকলকে সম্বোধন করে ওই লোকটার দিকে হাতে ইশারা করে বলেন,
“ইয়ে যো সাহেব হে, ইয়ে সাউথ আফ্রিকা কা হে” তোমরা এই লোকটা যে দেখতেছো, তার বাড়ী সাউথ আফ্রিকা। সে দারুল উলুম দেওবন্দের পারেগ। তার বাবাও দারুল উলুম দেওবন্দের ফারেগ। যখন সে দেওবন্দে পড়তো, তখন একেবারে হেংলা পাতলা ছিল। এখন সে মোটা হয়ে গেছে। কিভাবে মোটা হয়েছে জানো? সে ভিটামিন-বিবি পান করেছে। তোমরাও যদি ভিটামিন বিবি পান করো, তো তোমরাও মোটা হয়ে যাবে।
একথা শুনার পর পুরা ক্লাসরুমে আমরা সবাই হেসে উঠলাম। হুযুর হাসলেন। এভাবে হুজুর মাঝেমধ্যে ছাত্রদের সামনে কিছু হাস্যরস করতেন। হাসির কথা বলতেন। হাসির খোরাক দিতেন। ছাত্রদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতেন।

হযরতের পান খাওয়া :

আসরের পর হুজুরের বাসায় যখন আমরা যেতাম। প্রায় সময় দেখতাম যে, হযরত পান খেতেন। অনেক সৌখিনতার সাথে পান খেতেন। পান খুব বড় নিতেন না। ছোট্ট এক টুকরা পানের পুরাটায় খয়র এবং চুন মেখে নিতেন। সুপারি ও অন্যান্য মসলা দিয়ে পান চাবাতেন। আর কিছুক্ষণ পরপর থুক ফেলতেন।
পান খাওয়ার শেষ পর্যায়ে মুখে যে অবশিষ্ট পানের অংশ থাকতো, তিনি সেগুলো পিকদানিতে ফেলে কুলি করে নিতেন। আমি ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করেছি যে, হুজুর পান কিভাবে খান। হুজুর পান খেতেন না। চিবিয়ে ফেলে দিতেন।
পান সম্পর্কে হুজুর ক্লাসে একদিন আমাদেরকে বলেছিলেন,
پانی پینے کے لیے کھانا کھانے کے لیے اور پان تھوکنے کے لیے مگر لوگ اپنی پیٹ کو پیک دان بنالیا سب کھا لیتے ہیں.
‘পানি পিনে কে লিয়ে, খানা খানে কে লিয়ে, অওর পান থুকনে কে লিয়ে। মাগার লোক আপনি পেটকো পিকদান বানা লিয়া, সব খা লেতে হেঁ।
পান সম্পর্কে হুজুরের আরেকটি তথ্য আমি শুনেছি ঢাকা মাদানী নগর মাদরাসার কোনো এক আলেমের কাছে। তিনি বলেন, একবার মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী সাহেব রহ. মাদানী নগর মাদরাসায় আসেন। স্বন্দীপের হযরত আল্লামা শায়খ ইদরীস সাহেব রহ. হযরতকে অনেক মহাব্বত করতেন। আপ্যায়ন করতেন। একদিন খানা খাওয়ার পর হুজুর নিজের ব্যাগ থেকে পানের বাটা বের করেন। তা দেখে স্বন্দিপী হযরত রহ. হুজুরকে জিজ্ঞেস করেন, হযরত! আমাদের এলাকায় কি পান নেই? আপনি সাথে করে পান আনতে গেলেন কেন? হুজুর উত্তর করলেন, ভাই! আল্লাহ মিঁয়ানে রিজিক কা ওয়াদা কিয়া, কাহেঁ ভী চলে যাও, রিযিক মিল যায়েগা। মাগার পান তো রিযিক নেহীঁ, ইস লিয়ে মাঁই পান সাথ লে যাতা হুঁ।
হুজুর অনেক মজার মানুষ। হুজুরের কাছে থাকতে অনেক ভালো লাগতো। আল্লাহ তা‘আলা হুজুরের ইলমে আমলে বরকত দান করুন। হুজুরের ছায়াকে আমাদের জন্য আরো দীর্ঘদিন বাকি রাখুন। আমীন।



No comments:

Post a Comment

Post Top Ad

Your Ad Spot

Pages